সিলেট মাতালেন ‘সিলেটি পোয়া’

সিলেট মাতালেন ‘সিলেটি পোয়া’
সিলেটের বিপলু আহমেদের গোলে সিলেটে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচসেরাও হয়েছেন এই উইঙ্গার।

গ্যালারির সামনে দৌড়ে গিয়ে ডান হাত কপালে ঠেকিয়ে ‘স্যালুট’। কাদের উদ্দেশে বিপলু আহমেদের এমন সম্মান প্রদর্শন?

ম্যাচ শুরুর আগে টিভি পর্দায় বারবার দেখাচ্ছিল সাদা গেঞ্জিতে এক দল সমর্থক ভিন্ন ভিন্ন অক্ষরে ‘বি-প-এল-ইউ’ লিখে এনেছেন। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ গর্জনের সঙ্গে গ্যালারিজুড়েই তাই ‘বিপলু, বিপলু’ রব। সিলেটের মাঠে খেলা হবে আর তাঁর নামে গলা ফাটবে না, তা কী করে হয়! সিলেট জেলা স্টেডিয়াম যে বিপলুর ঘরের মাঠ। আর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথম দিনেই প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশকে জিতিয়ে সিলেট মাতিয়ে দিলেন ‘সিলেটি পোয়া’! যেন প্রথম দিনের প্রথম শোয়ে ছবি বক্স অফিস হিট!

লাওসের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১-০ গোলের জয়ের ম্যাচে আজ কিনা গোল করেছেন উনিশে পা রাখা সিলেটের তরুণ! এমনি এমনি তো আর তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়নি ম্যাচসেরার চেক। একমাত্র গোল করে দলকে এনে দিয়েছেন জয়। গোলটি পেতে ভাগ্যের ছোঁয়া লেগেছে, এটি অস্বীকার করার হয়তো সুযোগ নেই। কিন্তু বিপলুর ফুটবলীয় শৈলীর প্রশংসা করতেই হবে। যেভাবে ডান প্রান্ত দিয়ে ফমুলা ওয়ানের ফেরারি গাড়ির মতো দুর্দান্ত গতিতে ছুটছিলেন, তাঁকে ঠেকাতে ঘেমেনেয়ে ওঠার মতো অবস্থা লাওসের লেফটব্যাকের। কখনো বল হোল্ড করছেন, কখনো ওয়ান টাচে ছেড়ে দিচ্ছেন, আবার কখনো প্রতিপক্ষ দু-তিনজনকে পেছনে ফেলে গতি আর বল নিয়ন্ত্রণের সমন্বয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছেন। গাঁটের পয়সা খরচ করে যা দেখার জন্যই গ্যালারিতে এসে বসেন দর্শকেরা।

‘লাইন টু লাইন’ উইঙ্গার বলতে যা বোঝায়, তা-ই খেলে দেখিয়েছেন বিপলু। যেমন গতিতে আক্রমণে গিয়েছেন, আবার নিচে নেমে নিজেদের রক্ষণভাগকেও সমর্থন দিয়েছেন প্রচুর। সবচেয়ে বেশি চোখ জুড়িয়েছে স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবনের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান খেলে বারবার বক্সে ঢুকে আতঙ্ক ছড়ানো। হ্যাঁ, ব্যর্থতাও আছে। তা হলো বক্সে ঢুকে শেষ সময়ে ঠিকঠাক ফাইনাল পাসটা না দিতে পারা। কিন্তু এর জন্য ভারী মাঠও কম দায়ী নয়।

বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে ৪-৪-২ ফরমেশনে দল সাজিয়েছিলেন। তাঁর দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া ও মাসুক মিয়া জনির মধ্যে যুদ্ধাঙ্গ মনোভাব আছে। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার সুনাম আছে। কিন্তু একটা থ্রু ঠেলে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগ ভাঙার সুনামের যে বড় অভাব। বল দখলে রেখে পাসের পর পাস খেলেও নেওয়া যায়নি লাওস রক্ষণভাগের কঠিন পরীক্ষা। সেই পরীক্ষাটা নিয়েছেন বিপলু। তাঁর পায়ে বল গেলেই দর্শকদের বসতে হয়েছে নড়েচড়ে।

এশিয়ান গেমস থেকেই দারুণ ছন্দে গত মৌসুমে মোহামেডানের জার্সিতে খেলা সিলেটের তরুণ বিপলু। এশিয়াডের চারটি ম্যাচেই ডান প্রান্তে ছিলেন প্রাণবন্ত। ঘরের মাঠে সাফ ফুটবলেও খেলেছেন দুর্দান্ত। পায়ে যেমন বল রাখতে পারেন, তেমনি পারেন বল ছাড়াও পুরো মাঠ চষে বেড়াতে। মাঝে মাঝে তো মনে হয় অফুরন্ত দম নিয়ে মাঠে নেমেছেন! ফলে ব্রিটিশ কোচ জেমি ডের তুরুপের তাস উনিশের বিপলু।

শুরুতেই আজ টুর্নামেন্ট মাতিয়ে দিলেন বিপলু। সিলেটের দর্শকেরা এই আশায় বুক বাঁধবেন, গ্রুপ পর্বের আরও একটি ম্যাচে জাদু দেখাবেন তাঁদেরই ‘পোয়া’!

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment